শীঘ্রই ৫ শর্তে ৬ মাসের জন্য প্যারোলে মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া

রাজনীতি

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
বাইরে যতই একে অন্যকে আক্রমন করা হোক না কেন পর্দার আড়ালে বেগম খালেদা জিয়ার অন্তর্র্বতীকালীন জামিন বা প্যারোলের একটি রোডম্যাপ মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সরকারের একটি উচ্চমহল, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার এবং দুটি প্রভাবশালী দেশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলের ব্যাপারে সমঝোতা চলছে বলে জানা গেছে। এই সমঝোতা চূড়ান্ত যদি হয় তাহলে চলতি মাসেই বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি পেতে পারেন। মুক্তি পেয়ে তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোলের যে প্রক্রিয়া এবং রোডম্যাপ তৈরী করা হয়েছে সেটা অনুযায়ী প্রথমত আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বিএসএমএমইউতে বেগম খালেদা জিয়ার জন্য যে মেডিকেল বোর্ড সেই মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষা করবে এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিবে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার পরিবার বিশেষ করে তার ভাই শামীম ইস্কান্দার যিনি বিদেশে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। তাকে জানানো হবে যে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এই, তাকে বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসএমএম ইউ কর্তৃপক্ষের কিছু করণীয় নেই। এ ব্যাপারে তারা যেন আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে আবেদন করেন।

এর পরপরই প্যারোলের যে দ্বিতীয় ধাপ সেটি শুরু হবে। এই ধাপে থাকবে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তার পরিবার একটি প্যারোল দরখাস্ত তৈরী করবে এবং এই প্যারোল দরখাস্তটি জেল কর্তৃপক্ষর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে দেওয়া হবে। বেগম খালেদা জিয়া এই দরখাস্তে স্বাক্ষর করবে এবং জেল কর্তৃপক্ষর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে এই দরখাস্ত পাঠানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, দুই পক্ষের সমঝোতা অনুযায়ী এখন বেগম খালেদা জিয়া এই দরখাস্তে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া বা ক্ষমা প্রার্থনা বা দণ্ড মওকুফ ইত্যাদি কিছুই উল্লেখ করবে না। তিনি শুধুমাত্র উন্নততর চিকিৎসার জন্য প্যারোলের আবেদন করবেন।

জানা গেছে, প্যারোলের যে রোডম্যাপ চূরান্ত করা হয়েছে তা তৃতীয় ধাপে আছে। এই আবেদনটি যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসবে তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে এবং কিছু শর্ত সাপেক্ষে এই প্যারোলের আবেদনটি অনুমোদন করবে।

প্যারোলের আবেদনে যে শর্তগুলো থাকতে পারে, যেটি নিয়ে এখন পর্যন্ত আসলে ত্রিপক্ষীয় আলাপ-আলোচনায় সমঝোতার চেষ্টা চলছে তা হলো-

১. বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন।

২. তিনি ৩-৬ মাসের জন্য প্যারোল পাবেন।

৩. বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্ত হয়ে তিনি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য, বিবৃতি দেবেন না।

৪. খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্ত হলে প্রতি মাসে মাসে তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তার আইনজীবীর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন।

৫. বেগম জিয়া তার চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে আসবেন এবং আবার তার সাজাভোগ করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এই শর্তগুলো নিয়েই সরকার, বেগম জিয়ার পরিবার এবং দুটি দেশের কূটনীতিকরা কাজ করছেন এবং আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই এটা চূড়ান্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যদিও বিএনপির নেতৃবৃন্দ বলছেন যে, তারা এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না। কিন্তু বেগম জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যেহেতু প্যারোলটি একটি ব্যক্তিগত বিষয় এবং চিকিৎসার জন্য, এতে কোনো রাজনৈতিক বিষয় সংশ্লিষ্ট নয়- কাজেই তারা এই প্যারোলের সঙ্গে রাজনীতিকে যুক্ত করতে চাচ্ছেন না। খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসাই তাদের মূখ্য বিষয়।

সরকারের পক্ষ থেকেও আজ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত যদি একটা সমঝোতা হয়, তাহলে বেগম খালেদা জিয়া খুব সহজেই প্যারোলে মুক্ত হতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.