চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সরকারী রাস্তা কেটে মাটি আত্মসাত : রাস্তা দখলের পায়তারা

অপরাধ

রাফিউ হাসান :
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সরকারী রাস্তার মাটি কেটে নিয়ে রাস্তা দখলের চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। এবিষয়ে পক্ষে বিপক্ষে মামলা করেছে তারা।
ঘটনাটি উপজেলার মেহের দক্ষিন ইউনিয়নের ভোলদিঘী গ্রামে ঘটে।

জানা যায়, ওই গ্রামের মিয়াজী বাড়ির মাঝখান দিয়ে ৫০ বছর আগে একটি চলাচলের পথ ছিলো। ওই পথ ২৬ বছর আগে রাস্তায় পরিনত হয়। বর্তমানে রাস্তার জায়গার মালিকানা দাবি করেন একই বাড়ির মনির হোসেনের স্ত্রী তাছলিমা আক্তার সীমা (৩৫)। দাবি-নাদাবি নিয়ে একই বাড়ির দুটি পক্ষ দীর্ঘ ৪ বছর ধরে পক্ষে বিপক্ষে বিরোধিতা করে আসছে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৬ জুন শনিবার সকালে তাছলিমা আক্তার সীমা একদল মাটি কাটা লেবার দিয়ে ওই রাস্তার মাটি কেটে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। এই ঘটনা রাস্তার সুবিধাভোগিরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম এলএলবি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং উভয় পক্ষকে আইনশৃংখলা বজায়ে চলার পরামর্শ দেন।

রাস্তার সুবিধাভোগি মৃত- আবদুল জলিলের পুত্র হাজী বিল্লাল হোসেন বলেন, আজ থেকে ৫০ বছর আগের এই পথ দিয়ে আমরা হেটেছি এবং রাস্তাসহ দু’পাশের সকল জায়গাই আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। পায়ে চলা পথটি সময়ের চাহিদানুযায়ী এখন এটা রাস্তায় পরিনত হয়েছে এবং জনগনের সুবিধার কথা চিন্তা করে স্থানিয় ইউনিয়ন পরিষদ উক্ত রাস্তাটিকে কেয়ারের অন্তর্ভুক্ত করে বহুবার সংস্কার করেছে। আজ থেকে বিগত ৪ বছর উক্ত রাস্তার মালিকানা দাবি করেন মনির হোসেনের স্ত্রী তাছলিমা। এনিয়ে বহুবার মেল-দরবার ও মামলা মোকদ্দমা হয়েছে। কেউ এই রাস্তা নিয়ে প্রতিবাদ করলেই তাছলিমা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৮টি মামলা রয়েছে তার। সরকার জনগনের স্বার্থে জনগনের জায়গার উপর দিয়েই রাস্তা তৈরী করেন। তখন ওই জায়গা জনগনের বলে দাবি করার উপায় থাকে না। তার উপর সে উক্ত রাস্তার মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার পর এক পাশে চারাগাছ রোপন করে সরকারী রাস্তার জায়গা দখল দেয়ার অপচেষ্টা করছেন। আজ আমরা রাস্তার সুবিধাভোগিরা হাটে বাজারে এমন কি মসজিদে যেতে পারছিনা। এই রাস্তা সর্বসাধারণের জন্য পূণঃমেরামতসহ চলাচলে মুক্ত করে দেয়ার জন্য তিনি জোর দাবি জানান।

একই এলাকার মৃত- নোয়াব আলীর পুত্র মোঃ মুজাম্মেল হক মাষ্টার বলেন, আমার জন্মের পর থেকেই আমি এই পথ দিয়ে আসা যাওয়া করেছি। এই বৃদ্ধ বয়সে জানলাম সরকারী রাস্তাও ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে কেউ দখল দেয়। তিনি আরও বলেন, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। রাস্তাটি ভোলদীঘি হতে ফতেপুর এবং ভোলদীঘি হতে শাহরাস্তি বাজার। যার দুরত্ব গড় সাড়ে ৩ কিলোমিটার। এই রাস্তা দিয়ে ভোলদীঘি, মালরা, ফতেপুর, সোনাপুর, নয়নপুর, বরুলিয়া গ্রামের সাধারণ লেকজন যাতায়াত করে। উক্ত রাস্তার বেহাল দশাকারীর কঠোর বিচার দাবি করেন তিনি।

শাহজাহানের কন্যা আমেনা বেগম বলেন, গত ৩ বছর আগে তারা আমার বিয়ের সময় এই রাস্তায় বেড়া দিয়ে বরযাত্রি বাড়িতে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যা নিরসনে তৎসময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সামিউল মাসুদ নিজে এসে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। এভাবে তারা সব সময় রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান সফি আহমেদ মিন্টুর মৃত্যুতে তারই বোর্ডের সাবেক সদস্য আক্তারুজ্জামান মেম্বার বলেন, আমি প্রথমবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে এই রাস্তায় ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দকৃত কাজের অংশ হিসেবে মাটি ফেলে রাস্তা মেরামত করি।

রাস্তার জায়গার দাবিদার মৃত আবদুস ছোবাহানের পুত্র আজমল হক বলেন, এই পথকে ২০০১ সালে আমি রাস্তায় পরিনত করেছি। রাস্তাটি সম্পূর্ণ আমাদের জায়গার উপর দিয়ে গেছে। এই রাস্তা আমাদের এবং আমরাই দাবিদার।

রাস্তার মাটি কর্তনকারী তাছলিমা আক্তার সীমা বলেন, আমরা এলাকার সাধারণ মানুষকে দয়া করে এই পথ দিয়ে হাটতে দিয়েছি। তার অর্থ এই নয় যে এই জায়গার মালিক তারা। আমি আমার জায়গার মাটি কেটে এনেছি এবং আমার জায়গায় চারাগাছ রোপন করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদ অথবা সরকারকে আমার জায়গায় মাটি ফেলতে বলিনি। এর দায়ভারও আমি গ্রহন করবো না। আমি এই রাস্তার জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা করেছি যা আজও চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.