সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে নদী ভাঙ্গন,কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার এখনই সময়

ফিচার

আল ইমরান মনু :
দেশের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের ধারায় রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎসহ সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যখন জ্বলজ্বল করছে ঠিক এমন সময়েও যেন প্রত্নতাত্তিক যুগে রয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা। অবহেলিত যমুনা বিধৌত চৌহালী যমুনার করাল গ্রাসে বিলীন প্রায়। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে স্থল ও উমারপুর ইউনিয়ন পুরোটা ও ঘোরজান ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ রাক্ষুসে যমুনায় বিলীন হয়েছে তো সেই কবেই। বাকী বাঘুটিয়া, খাষপুখুরিয়া, খাষকাউলিয়া ও সৌদিয়া চাঁদপুরের বেশির ভাগ অংশ হারিয়ে গেছে মানচিত্র থেকে। ভাঙ্গনের কারণে উপজেলার মানুষের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ। কেউ হারিয়েছেন পরিবার, কেউ জীবিকা অধিকাংশই হয়েছেন নিঃস্ব আর সর্বশান্ত! কিন্তু ভাঙ্গন রোধে নেয়া হয়নি কার্যকর কোনো ব্যাবস্থা। এর আগে ২০০৯-২০১৭ সালে প্রায় ১৫৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ১০ কিঃ মিঃ তীর রক্ষা বাধের কাজ, (৫ কিঃ মিঃ টাঙ্গাইল ও ৫ কিঃ মিঃ চৌহালী অংশে) করলেও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না যে, আর ভাঙ্গবে না। চৌহালীর খাষপুখুরিয়া ও বাঘুটিয়া তীর রক্ষা বাঁধের আওতায় না পরার কারনে বর্ষা মৌসুমসহ এখনো নদী ভাঙ্গন চলমান। নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চৌহালীর সাধারন মানুষ বার বার মানববন্ধনসহ নানাভাবে দাবী জানালেও এখনো কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এছাড়াও যোগাযোগ ব্যাবস্থায়ও পিছিয়ে আছে চৌহালীর জনগণ। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি। উপজেলা সদরে যাতায়াতের জন্য জোট সরকারের আমলে একটি রাস্তা নির্মাণ হয়েছিলো চৌহালী সদর থেকে পাথরাইল পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিঃ মিঃ। কিন্ত গত কয়েক বছরের নদী ভাঙ্গনের কারনে পাথরাইল থেকে মিটুয়ানী পর্যন্ত প্রায় ৮ কিঃ মিঃ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন বাঘুটিয়া ও উমারপুরের জনগন সড়কপথে উপজেলা সদরে যেতে পারেন না, পাকা রাস্তা না থাকার কারনে। ভৌগোলিক অবস্থার কারনে চৌহালী ব্যাপক সম্ভাবনাময় একটি জায়গা। রাজধানির গাবতলি থেকে কালামপুর হয়ে চৌহালীর বাঘুটিয়া নদী ঘাটের দুরত্ব প্রায় ১০০ কিঃ মিঃ । বাঘুটিয়া নদী ঘাট থেকে নৌকাযোগে পাবনার বেড়া ঘাটে যেতে সময় লাগে ৪০-৫০ মিনিট। নদী বেরীবাধ দিয়ে ভাঙ্গন রোধ করে কালামপুর থেকে চৌহালীর বাঘুটিয়া পর্যন্ত দুইলেন রাস্তা করা হলে পাবনাসহ যমুনার পশ্চিমাঞ্চল ও চৌহালী, নাগরপুর, ঘিওর, দৌলতপুরের মানুষ খুব কম সময়ে ও কম খরচে রাজধানীর সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবে, সাথে ব্যবসা বাণিজ্যেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে। এছাড়াও যমুনায় জেগে ওঠা চরে ভাঙ্গন রোধ করে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। তাছাড়াও বালুকাময় পরে থাকা হাজার হাজার একর জমিকে কাজে লাগিয়ে আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর ও স্টেডিয়াম নির্মান করা সম্ভব। ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ পশ্চিম ও উত্তরের জেলার মানুষ খুব সহজে ব্যবহার করতে পারবে বিমান বন্দর, খেলাধুলাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবে স্টেডিয়াম সহ পরিকল্পিত এই এলাকায়। পুরোপুরি নদী শাসন করে শিল্প কারখানা করলে কমপক্ষে ১০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। যে হারে রাজধানীতে প্রতিদিন মানুষের চাপ তৈরী হচ্ছে তাতে আগামী কয়েক বছরে ঢাকা অচল হয়ে পরবে। চৌহালী, নাগরপুর, ঘিওরসহ পার্শবর্তী এলাকার কয়েক লক্ষ মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকা ও ঢাকার পার্শবর্তী দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বসবাস করছে। নিজ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে এদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ এসে বাড়ীতে থেকে কর্ম করতে পারবে। পাশাপাশি ঢাকার বস্তিদের চৌহলীর বিভিন্ন চরে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এতে ঢাকার চাপ যেমন কমবে তেমনি রাজধানী হবে বস্তি মুক্ত। আর বস্তিবাসীরাও আত্নসম্মান নিয়ে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে। উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে চৌহালীর জনগণ মনে করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.