যে কোন সময় প্যারোলে মুক্তি নিয়ে রাজনীতিকে বিদায় জানাতে পারেন খালেদা জিয়া

রাজনীতি

অনলাইন ডেস্ক :
আজ ৭ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার কারাভোগের দুই বছর পূর্তি হচ্ছে। খালেদা জিয়া যখন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়েছিলেন এবং যখন তাকে কারান্তরীণ করা হয়েছিল, তখন কেউই ভাবেনি বেগম খালেদা জিয়াকে এত দীর্ঘ সময় কারাগারে থাকতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বলেছিলেন যে, আমি খুব শীঘ্রই বেরিয়ে আসবো। বিএনপির নেতারাও বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিছুদিনের মধ্যে তিনি বেরিয়ে যাবেন। তার আরো ব্যাপক জনপ্রিয়তা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, বেগম খালেদা জিয়া এখনো জেলে রয়েছেন। আপাতত তার মুক্তির কোন সম্ভাবনা নেই। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ৩ ধরণের পথ খোলা ছিল।

প্রথম পথ ছিল, আইনী লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। আইনী লড়াইয়ে বিএনপি স্পষ্টতই পরাজিত হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টেল আপিল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছে। যার ফলে বেগম খালেদা জিয়ার আইনী পথে মুক্তির আর কোন সম্ভাবনা নেই। এরপরে যে উপায় ছিল বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির তা হলো; বড় আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত করা। কিন্তু খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি কোন কার্যকর অর্থবহ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।

এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার যখন জামিনের সম্ভাবনা নাকচ হয়ে যায় তাঁর আগে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেছিল যে, যদি বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত জামিন না দেয় তাহলে ১ দফা আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনা হবে। তবে ১ দফা আন্দোলন তো দূরের কথা একটি কর্মসূচীও বিএনপি দিতে পারেনি।

এরপরে বাকি থাকে তৃতীয় যে পথ তাঁর মুক্তির, সেটি হলো রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। কিন্তু ১ বছর আগেও সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তির ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়াই সে প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। বরং তিনি প্যারোল বা বিশেষ বিবেচনায় জামিনের ব্যাপারটিকে তাঁর জন্য অপমানজনক বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু আইনি পথে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ শেষ হয়ে যাবার পর এখন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই প্যারোলে আগ্রহী এবং তিনি তাঁর পরিবারকে প্যারোলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিকে আদালতের বিষয় এবং সরকারের কিছু করনীয় নেই বললেও সরকারের তরফ থেকে এটাও বলা হয়েছে যে প্যারোলের আবেদন আসলে তারপর সরকার এই বিষয়টি চিন্তাভাবনা করবেন। একাধিক দায়িত্বশীল নিশ্চিত করেছে, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারে দেনদরবার আলাপ আলোচনা চলছে। বিশেষ করে তিনটি বিষয় নিয়ে প্যারোলের আনুষ্ঠানিক আবেদন বিষয়টি আটকে আছে বলে বেগম জিয়ার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রথমত, প্যারোলের আবেদনে বেগম খালেদা জিয়াকে তার অপরাধের দোষ স্বীকারের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এই অপরাধের জন্য তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য বলা হয়েছে। তৃতীয়ত, তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবেন না এই বিষয়টি উল্লেখ করার কথা বলা হয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এই তিনটি বিষয় নিয়ে শুরুতেই বেগম খালেদা জিয়ার আপত্তি ছিল। শুধুমাত্র তিনি অসুস্থ এবং বিশেষ বিবেচনায় তাকে যেন জামিন দেওয়া হয় এই ভেবেই তিনি আবেদন করার পক্ষপাতি ছিলেন। কিন্তু এই ব্যাপারে যখন সমঝোতা হয়নি তখন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার সরকারের কাছে দ্বিতীয় বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। তাতে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

রাজনীতি থেকে সরে দাড়িয়ে বেগম খালেদা জিয়া প্যারোলের আবেদন করবেন। তবে এখানে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা বা দোষ স্বীকার করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকার এ রকম একটি আবেদন গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে,  শুক্রবার অথবা শনিবার বেগম খালেদা জিয়া কারাগারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্যারোলের আবেদনে স্বাক্ষর করতে পারেন। আর সেই আবেদনটি জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পৌঁছানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.