বগুড়া কাহালুতে বোরো চাষিদের সর্বনাশ জমিতই ধান হতে চারা গজিয়ে পচন

অন্যান্য

মতিন খন্দকার টিটু :
প্রাকৃতিক দুর্যোগে শষ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত কাহালু উপজেলায় বোরো চাষিদের বড় ধরনের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তাদের অর্জিত অর্ধেক ধান কাটা-মাড়াইয়ের আগেই অধিকাংশ জমির ধান জমিতেই টেকে পচে যাচ্ছে।
ঘুর্ণিঝড় আম্পান থেকে শুরু করে অত্র উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যায় কয়েক দফা ঝড়। তার উপর প্রতিনিয়ত ভারী বৃষ্টিপাত। ঝড় ও বৃষ্টিপাতে এখানে সবচেয়ে বেশী ক্ষতির মুখে পড়েছেন বোরো ধান চাষিরা। তাদের কষ্টে অর্জিত এখনো অর্ধেক ধান জমিতেই রয়ে গেছে। ঝড়ে নুয়ে পড়েছে বেশীরভাগ জমির ধান। বিভিন্ন মাঠে জমিতে রয়েছে কোমর পর্যন্ত পানি। কোথাও কোথাও পানির নীচে তলিয়ে গেছে ধান। এখন বিভিন্ন মাঠে ধান আর পানি থৈ থৈ অবস্থা।
সারাই গ্রামের বোরো চাষি সাগর সরকার জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে ধানচাষ করেন। বর্তমানে ওই ৪ বিঘা জমির ধানই টেকে গেছে। ধানচাষের খরচ এবার কোনভাবেই উঠবেনা। রোস্তমচাপড় গ্রামের আবু তাহের জানান, তিনি ৭ বিঘা জমিতে ধান লাগান। তার অর্ধেক জমির ধান জমিতেই টেকে পচে গেছে। স¤প্রতি বিঘা তিনেক জমির ধান কাটলেও সব ধানই টেকে গেছে। বুড়লই গ্রামের মোমিন জানান, তিনি তিন বিঘা জমিতে ধানচাষ করেন। ধান কাটা-মাড়াই করলেও সব ধানই টেকানো। তার ১ বিঘা জমিতে চাষাবাদের খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। টেকানো ধান শুকানো হলেও কেউ কিনতে চায়না। কারণ ধান শুকানোর পর তা খুবই কালচে হয়েছে। সারাই গ্রামের হাফিজার রহমান জানান, তিনি ১৫ বিঘা জমিতে ধান লাগান। তারমধ্যে তিন বিঘার ধান কেটেছেন। কাটা ধান ও জমিতে থাকা ধান গুলো সবই টেকানো। আবার কোন জমির ধানে চারার মত গজিয়েছে। সারাই গ্রামের মহসিন জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে ধান লাগান। তারমধ্যে জমিতেই টেকানো ৪ বিঘার ধান কাটা-মাড়াই করে চাতালে শুকাচ্ছেন। বাঁকী ৪ বিঘা জমির ধান জমিতেই টেকে পচে যাচ্ছে। দামাই গ্রামের জসিম উদ্দিন জানান, তিনি ১০ বিঘা জমিতে ধান লাগান। সবেমাত্র ধান কাটা শুরু করেছেন। কিন্ত সব গুলো জমির ধান টেকে যাওয়ায় চাষাবাদের খরচ তোলা নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত।
এদিকে দরগাট, নারহট্ট, মাধববাঁকা, বিনোদসহ বিভিন্ন এলকায় লক্ষ করা গেছে অনেক জমিতে ধানে চারা গজিয়েছে। কোমর অবধি পানিতে নেমে সেই ধান কেটে পানিতে ভাসিয়ে এনে রাস্তার উপর তোলা হচ্ছে। অনেক ধান শুকানো জায়গা পাচ্ছেনা। রাস্তার উপর খামাল দেওয়া ধানের আঁটিতে গজাচ্ছে চারার মত। অনেক আবার রাস্তার উপরেই ধান শুকাচ্ছেন।
উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা তপন রায় জানান, চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে তারমধ্যে ৯ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। দ্রুত ধান চাষিরা যাতে ঘরে তুলতে পারে তার জন্য দুটি হারভেস্টার মেশিন নামানো হয়েছে। এদিকে সরকারি ভূতুর্কিতে দেওয়া হারভেস্টার মেশিন মালিক ডাবলুর ম্যানেজার জানান, মোস্তফা জানান, চলতি মৌসুমে তাদের মেশিনে মাত্র ৬০ হেক্টর জমির ধান কাটা-মাড়াই করা হয়েছে। জমিতে পানি বেশী থাকায় বর্তমানে মাঠে মেশিন নামানো তো দুরের কথা নিজের জমির ধানই কাটা-মাড়াই করা যাচ্ছেনা।
উপজেলা কৃষষি অফিসার মোঃ আখেরুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখানে আক্রান্ত জমির পরিমান ৪০৬ হেক্টর। তারমতে ৬০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখানে প্রায় ৪ হাজার চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাহির থেকে ২ হাজার শ্রমিক এনে চাষিদের ধান কাটা-মাড়াইয়ে সহআেগিতা করা হয়েছে। তারপরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি হলে আমাদের করার কি আছে। এখানে ক্ষতির পরিমান বিষয়ে আমরা লিখিতভাবে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবগত করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাছুদুর রহমান জানান, এখানকার বোরো চাষিদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কৃষি অফিসারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.