ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জলোচ্ছাসে ইন্দুরকানীতে ক্ষতিগ্রস্থ ইট ভাটা মালিকদের মাথায় হাত

দুর্ঘটনা

রনিকা বসু মাধুরী, পিরোজপুর থেকে :
পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়ে ৫ টি ইট ভাটায় ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলোচ্ছাসে কাদাপানিতে নস্ট হওয়া সহ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ইট পোড়ানোর জন্য দুটি ভাটার প্রায় আড়াই’শ টন কয়লা। এতে ৫ টি ইট ভাটার সবমিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার উপরে বলে দাবি ভাটার মালিকদের।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের কঁচা ও পানগুছি নদীর মোহনা থেকে শুরু করে পূর্ব চন্ডিপুর লঞ্চঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের মধ্যে ৫ টি ইট ভাটা অবস্থিত। ঘূর্নিঝড় আম্ফানের প্রভাবে নদীর পানি দক্ষিন প্রান্তের ১০ ফুট উচু বেড়িবাঁধ উপচে এবং উত্তর প্রান্তে অসম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ দিয়ে সহজেই জোয়ারের অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয় ইট ভাটা গুলো। এতে একই স্থানে ৫ টি ইট ভাটার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সবমিলিয়ে ৮০ লাখ টাকার উপরে বলে জানিয়েছেন ভাটার মালিকরা। এদের মধ্যে আলামিন ব্রিকক্স (এবিআই) ও নিয়াজ ব্রিকক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ (এনবিআই) ২টি ইট ভাটায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অর্ধ কোটি টাকার বেশি বলে জানান দুই ভাটার মালিক। এ ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তাদের আগামী ২ বছর সময় লাগতে পাড়ে বলে ধারনা তাদের।
নদী তীরবর্তি এলাকায় ইট ভাটা অবস্থিত হওয়ায় এবং আলামিন ব্রিক্স ও নিয়াজ ব্রিক্স ভাটা সংলগ্ন কচা নদীর কিনারে প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়ি বাঁধ না থাকায় ঐ দুটি ভাটার ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক বেশী। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ঐ অসম্পূর্ন আধা কিলোমিটার বেড়িবাধের স্থানে মাটির রাস্তা নির্মান করেন আলামিন ব্রিক্স এর প্রোপ্রাইটর মোঃ জাহাঙ্গীর শেখ। কিন্তু আম্ফানে অতিরিক্ত পানির চাপে নির্মিত সে রাস্তা ধূয়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, তার ভাটায় ক্লিনে সাজানো তিন লক্ষ ইট এবং জামস্টাইকে রাখা তিন লক্ষ ইট মোট ৬ লক্ষ ইট এবং শ্রমিকদের থাকার জন্য নির্মিত কাঠের তৈরী দুই খানা ঘর ইট পোড়ানোর জন্য স্তুপ করে রাখা ১০০ টনের অধিক কয়লা বৃষ্টি ও অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২৪ লক্ষাধীক টাকা। এছাড়া ঐ ইট ভাটার পাশে তার বড় ভাই নাছির উদ্দিন শেখের মাছের ঘের রয়েছে। ঐ পুকুর তলিয়ে গিয়ে প্রায় চার লক্ষ টাকার মাছ পানিতে ভেসে যায়। এতে সব মিলিয়ে আম্ফানে তার ভাটার প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে তিনি জানান।
অপরদিকে নিয়াজ ব্রিক্স এর মালিক শাহজাহান শেখ জানান, তার ভাটায় ক্লিনে সাজানো প্রায় তিন লক্ষ ইট এবং পটে সাজানো ৩ লক্ষ ইট মোট ৬ লক্ষ কাচা ইট ঘূর্নিঝড় আম্ফানের জলোচ্ছাসে নষ্ট হয় এবং দেড়’শ টন কয়লা পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য ২৭ লক্ষ টাকা।
নিয়াজ ব্রিক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ বেল্লাল হোসেন জানান, বিগত বছরে আমাদের এখানে ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাদ্ধ দেয়। এর মধ্যে চন্ডিপুর খাল থেকে এসবিআই ভাটা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মান কাজ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার কাজ শুরু করার পর দেড় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মান করার পর স্থানীয় জমির মালিকদের বাধার মূখে বেড়িবাঁধের নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ কারনে আমাদের এখানকার দুটি ইট ভাটা সংলগ্ন নদীর তীরে বেড়ি বাঁধ না থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনেক বেশী যা আমাদের কাটিয়ে উঠতে প্রায় ২ বছর সময় লাগবে।অপরদিকে আরওয়ান ব্রিকক্স (এএমবিআই), শাহানাজ ব্রিকক্স (এসবিআই) এবং হাওলাদার ব্রিকক্স ইন্ডাষ্ট্রিজেও (এইচবিআই) প্রায় ত্রিশ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপশি এ তিনটি ইট ভাটা কচা ও পানগুছি নদীর মোহনায় অবস্থিত। স্বাভাবিক জোয়ারেই এখানে পানির চাপ বেড়ে যায় কয়েক ফুট। সরাসরি নদীর তুফানের ধাক্কা লাগে নদীর মোহনায় অবস্থিত এই ঝুকিপূর্ণ পয়েন্টির বেড়িবাঁধে। এখানকার ১০ ফুটের বেশি উচ্চতার এ বেড়িবাঁধ আম্পানের জলোচ্ছাসে তলিয়ে পানি উপচে পড়ে ভাটা গুলো প্লাবিত হয়ে যায়।
আরওয়ান ব্রিকক্স ইন্ডাষ্ট্রিজের (এএমবিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: মাসুম বিল্লাহ জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জলোচ্ছাসে বেড়িবাঁধ উপচে পানিতে প্লাবিত হয়ে আমাদের ইট ভাটার অন্যান্য মালামাল ও ইট সহ প্রায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টেকসঁই বেড়িবাঁধ নির্মিত না হওয়ার কারনে প্রতিবছর ক্ষতির কবলে পড়তে হচ্ছে এখানকার ইট ভাটা গুলোকে। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তাদের।স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: আবুল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়ে খোলপটুয়া এলাকার ৫ টি ইট ভাটার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে আম্ফানের জলোচ্ছাসে কলারন থেকে টগড়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ সহ খোলপটুয়া গ্রামের ইট ভাটা গুলোর ক্ষয়ক্ষতি দেখতে আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ সময় ইন্দুরকানী উপজেলা চেয়ারম্যান এড এম মতিউর রহমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মাদ আল মুজাহিদ সাথে ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.